ব্র্যান্ডের আসল অর্থ এবং বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ
ব্র্যান্ড কী?
ব্র্যান্ড হলো একটি নাম, প্রতীক, নকশা, বা বৈশিষ্ট্যের
সমন্বয় যা একটি পণ্য বা সেবাকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে তোলে। এটি শুধু একটি লোগো
বা স্লোগান নয়, বরং গ্রাহকদের মনে একটি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা এবং আবেগময় সংযোগ তৈরি
করে।[1][2][3]
আমেরিকান মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সংজ্ঞা
অনুযায়ী: "একটি ব্র্যান্ড হলো এমন একটি
নাম, শব্দ, নকশা, প্রতীক বা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য যা একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে
অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে"।[1]
ব্র্যান্ডের মূল উপাদানসমূহ
একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করতে ৮টি মূল
উপাদান প্রয়োজন:[4][5][6]
১. ব্র্যান্ড নাম
ব্র্যান্ডের নাম হলো গ্রাহকদের সাথে প্রথম
যোগাযোগের মাধ্যম। এটি স্মরণীয়, উচ্চারণে সহজ এবং কোম্পানির মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
হতে হবে।[5]
২. লোগো
লোগো হলো ব্র্যান্ডের দৃশ্যমান পরিচয়। নাইকের
সুশ, ম্যাকডোনাল্ডের সোনালি আর্চ, বা অ্যাপলের আপেল - এই লোগোগুলো দেখলেই আমরা ব্র্যান্ড
চিনে ফেলি।[3][5]
৩. রঙের প্যালেট
রং আমাদের আবেগকে প্রভাবিত করে। কোকা-কোলার
লাল রং উৎসাহ ও খুশির প্রতীক, আর IBM-এর নীল রং বিশ্বস্ততা ও প্রযুক্তির প্রতীক।[6][5]
৪. টাইপোগ্রাফি
ফন্ট নির্বাচন ব্র্যান্ডের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ
করে। আনুষ্ঠানিক ব্যবসার জন্য ক্লাসিক ফন্ট, আর আধুনিক টেক কোম্পানির জন্য মিনিমালিস্ট
ফন্ট ব্যবহৃত হয়।[4][5]
Brand identity elements working
together to create brand recognition
বাস্তব জীবনে ব্র্যান্ড কীভাবে কাজ করে?
গ্রাহক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব
গবেষণা দেখায় যে ৬২% ভোক্তার ক্রয় সিদ্ধান্তে
ব্র্যান্ড পরিচয় প্রভাব ফেলে। একটি ব্র্যান্ডের মাত্র ৭ সেকেন্ড সময় আছে ভালো প্রথম
ধারণা তৈরি করার জন্য।[6]
আবেগময় সংযোগ তৈরি
৫০% এর বেশি ক্রয়ের অভিজ্ঞতা আবেগের উপর
ভিত্তি করে, যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তের উপর নয়। যেসব গ্রাহকরা আবেগময়ভাবে যুক্ত থাকেন,
তারা তিনগুণ বেশি সুপারিশ করেন এবং পুনরায় ক্রয় করেন।
বিশ্বাস ও আস্থা গড়ে তোলা
৮১% ভোক্তা বলেছেন যে ক্রয়ের আগে তাদের ব্র্যান্ডের
উপর আস্থা থাকতে হবে। একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচয় এই আস্থা তৈরি করতে সাহায্য
করে।[7][6]
বিখ্যাত ব্র্যান্ডের উদাহরণ
নাইক - "Just Do It"
নাইকের ব্র্যান্ড কনসেপ্ট হলো ক্ষমতায়ন ও
ক্রীড়াবিদসুলভ মনোভাব। তাদের "Just Do It" স্লোগান তিন দশক ধরে একই রয়েছে
এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্রাহকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।[8][2]
স্টারবাকস - ব্যক্তিগতকরণ
স্টারবাকসের দৃষ্টিভঙ্গি হলো "বিশ্বের
সর্বোত্তম কফির প্রধান সরবরাহকারী" হওয়া। তারা গ্রাহকদের নাম কাপে লিখে ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা তৈরি করে।[8]
কোকা-কোলা - সুখ ও ভাগাভাগি
কোকা-কোলা সুখ ও একসাথে থাকার অনুভূতি প্রচার
করে। তাদের বিজ্ঞাপনে সবসময় উৎসব ও আনন্দের ছবি দেখা যায়।[2]
Brand style guide showing logo
variations, color palette with hex codes, and typography choices to illustrate
brand identity elements.
ব্র্যান্ড কৌশলের প্রকারভেদ
আধুনিক ব্র্যান্ডিং-এ চারটি প্রধান কৌশল রয়েছে:
কৌশল |
বর্ণনা |
ব্র্যান্ড
সম্প্রসারণ |
বিদ্যমান ব্র্যান্ডকে নতুন পণ্যের বিভাগে প্রসারিত করা |
লাইন সম্প্রসারণ |
একই পণ্যের বিভাগের মধ্যে ব্র্যান্ডের পরিসর বাড়ানো |
উদ্ভূত ব্র্যান্ডিং |
একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে আলাদা ব্র্যান্ড পরিচয় দেওয়া |
ব্যক্তিগত
ব্র্যান্ডিং |
দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা |
গ্রাহকের ক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্র্যান্ডের
ভূমিকা
গ্রাহকরা ছয়টি ধাপে ক্রয় সিদ্ধান্ত নেন:
1. সমস্যা চিহ্নিতকরণ - প্রয়োজন অনুভব
2. তথ্য অনুসন্ধান - বিকল্প খোঁজা
3. বিকল্প মূল্যায়ন - ব্র্যান্ড তুলনা
4. ক্রয় সিদ্ধান্ত - ব্র্যান্ড নির্বাচন
5. ক্রয় - কার্যকর ক্রয়
6. ক্রয়-পরবর্তী
মূল্যায়ন - সন্তুষ্টি
যাচাই
প্রতিটি ধাপে ব্র্যান্ড গ্রাহকের সিদ্ধান্তকে
প্রভাবিত করে।
ডিজিটাল যুগে ব্র্যান্ডিং
আজকের ডিজিটাল যুগে ব্র্যান্ডিং-এর পরিসর
আরও বিস্তৃত হয়েছে
Infographic explaining a digital
branding service package using social media profiles, a website, and
advertising campaigns to build and showcase a brand online.
:
·
সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি - ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম
·
ওয়েবসাইট ডিজাইন - ব্র্যান্ড পরিচয় প্রতিফলন
·
কন্টেন্ট মার্কেটিং - মূল্যবান তথ্য প্রদান
·
গ্রাহক সেবা - ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতা তৈরি
ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক মূল্য
২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ব্র্যান্ডের
মোট মূল্য ছিল ৬.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি প্রমাণ করে যে শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচয় কোম্পানির
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হতে পারে।[3][6]
উপসংহার
ব্র্যান্ড কেবল একটি নাম বা লোগো নয় - এটি
গ্রাহকদের সাথে গভীর সংযোগ স্থাপনকারী একটি সামগ্রিক অভিজ্ঞতা। বাস্তব জীবনে, ব্র্যান্ড
আমাদের ক্রয় সিদ্ধান্ত, আবেগ এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।[1][2]
একটি সফল ব্র্যান্ড তৈরি করতে দরকার সুচিন্তিত
কৌশল, ধারাবাহিকতা এবং গ্রাহকদের সাথে আবেগময় সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা। আজকের প্রতিযোগিতামূলক
বাজারে, একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচয় ব্যবসায়িক সাফল্যের চাবিকাঠি।[3][6][9][7]
⁂
1.
https://www.vedantu.com/commerce/branding
2.
https://plutuseducation.com/blog/brand-concept/
3.
https://www.investopedia.com/terms/b/brand.asp
4.
https://www.shopify.com/in/blog/brand-elements
5.
https://www.bynder.com/en/glossary/brand-elements/
6.
https://musemind.agency/blog/elements-of-branding-identity-in-design
7.
https://www.youngurbanproject.com/what-is-brand-marketing/
8.
https://brandmasteracademy.com/inspiring-brands/
9.
https://advertising.amazon.com/library/guides/brand-marketing
10.
https://ca.indeed.com/career-advice/career-development/what-is-brand-concept
11.
https://www.higherlogic.com/blog/examples-of-authentic-brand-voice/
12.
https://www.printivity.com/insights/8-brand-identity
13.
https://www.askattest.com/blog/articles/brand-identity-examples
Comments
Post a Comment